বছর নয়, কয়েক ঘণ্টাতেই নাকি তৈরি হয়েছিল চাঁদ, বলছে সুপার কম্পিউটার
চাঁদের জন্ম কীভাবে? আমাদের পৃথিবীর একমাত্র এই উপগ্রহের গঠনের পিছনে বেশ কিছু তত্ত্ব রয়েছে। বেশিরভাগ তত্ত্ব অনুযায়ী পৃথিবীর সঙ্গে কোনও বিশাল মহাজাগতিক বস্তুর সংঘর্ষের পরে ধ্বংসাবশেষের সংমিশ্রণ থেকে চাঁদ উদ্ভূত হয়েছে। সময় লেগেছে বহু বছর।
তবে বিজ্ঞানীদের এই তত্ত্বকে যেন কিছুটা নাড়িয়ে দিয়েছে একটি সুপার কম্পিউটার। তার শক্তিশালী কম্পিউটেশনাল ক্ষমতা ব্যবহার করে, বিজ্ঞানীরা চাঁদের উত্পত্তির রহস্য জানার চেষ্টা করেন। আর তারপরেই উঠে আসে চমকপ্রদ এক তত্ত্ব। সুপার কম্পিউটারের প্রদত্ত তথ্য থেকে বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, চাঁদের গঠনের এই প্রক্রিয়াটি খুব বেশি দীর্ঘ সময় ধরে চলেনি। সংঘর্ষের মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই, কার্যত অবিলম্বেই চাঁদের সৃষ্টি হয়েছে।
দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্সে প্রকাশিত এই যুগান্তকারী গবেষণা শোরগোল ফেলে দিয়েছে বিজ্ঞানীমহলে। গবেষণার প্রধান লেখক জ্যাকব কেগেরেস নাসাকে এই বিষয়ে বলেন, ‘এটি চাঁদের বিবর্তনের সম্ভাব্য প্রারম্ভিক তত্ত্বের ক্ষেত্রে একটি সম্পূর্ণ নতুন পরিসর খুলে দিয়েছে।’
চাঁদের গঠনের সবচেয়ে জনপ্রিয় তত্ত্বটি জানেন?
চাঁদের গঠনের সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত মডেল অনুযায়ী, বহু বিলিয়ন বছর আগে, থিয়া নামক একটি মহাজাগতিক বস্তুর সঙ্গে আমাদের পৃথিবীর সংঘর্ষ হয়েছিল। এই থিয়া আকারে প্রায় মঙ্গল গ্রহের মতো ছিল। ফলে কী সাংঘাতি সংঘর্ষ, তা সহজেই অনুমেয়।
এই সংঘর্ষের ফলে থিয়া ও পৃথিবীর কিছুটা অংশ টুকরো টুকরো হয়ে ছিটকে যায়। তাতে পৃথিবীর উপাদান কম। থিয়ার টুকরোই বেশি। পরবর্তীকালে বহু বছর ধরে সেটি একত্রিত হয়েই নাকি চাঁদের বর্তমান রূপ নিয়েছে।
এই তত্ত্বে সমস্যা
এদিকে চন্দ্রপৃষ্ঠের নমুনা থেকে, বিজ্ঞানীরা আরও একটি বিষয়ে অনুমান করতে সক্ষম হয়েছেন। চাঁদের গঠনকারী অনেক উপাদানই মূলত পৃথিবী থেকে এসেছে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।
এই তত্ত্বের সমস্যা হল, থিয়া ও পৃথিবীর সংঘর্ষের পৃথিবীর ক্ষতি তুলনামূলকভাবে কমই হয়েছিল। ফলে পৃথিবী থেকে বিচ্যুত অংশই নেহাত্ই কম ছিল। থিয়া কক্ষপথে ছড়িয়ে যায়। পড়ে এই পৃথিবী থেকে বিচ্যুত অংশগুলির সঙ্গে মেশে। এমনই যদি হয়, তাহলে পৃথিবীর উপাদান চাঁদের এত বেশি থাকবে কেন? সেক্ষেত্রে তো থিয়ার উপাদান বেশি হওয়ার কথা। অথবা থিয়াকে আইসোটপিকভাবে পৃথিবীর সঙ্গে একইরকম হতে হবে। যেটা কিনা একেবারেই অসম্ভব।
নয়া তত্ত্ব
এই নতুন সিমুলেশনে, গবেষকরা চাঁদ তৈরির ক্ষেত্রে আরও বেশি করে পৃথিবীর উপাদান ছিল(থিয়ার তুলনায়) বলে ধরেছেন। বিশেষ করে এর বাইরের স্তরের ক্ষেত্রে। এর মাধ্যমে চন্দ্রপৃষ্ঠের সঙ্গে পৃথিবীর উপাদানের মিল ব্যাখা করা সম্ভব। আর সেক্ষেত্রে চাঁদের তৈরি হওয়ার সময়ও লেগেছে অনেক কম।
এই তত্ত্ব দিয়ে চাঁদের কক্ষপথ এবং পাতলা ভূত্বকের বিষয়টিও ব্যাখা করা সম্ভব।